Castor Oil/ক্যাস্টর ওয়েল

ক্যাস্টর অয়েল বা রেড়ির তেল উচ্চ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা মাথার ত্বক চুলে খুব ভালো কাজ করে। এই তেলে থাকা ব্যাক্টেরিয়া ও প্রদাহরোধী উপাদান মাথার ত্বককে সুরক্ষিত রাখে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় এর ঘনত্ব বেশি। ফ্যাকাশে হলুদ রঙের এই তেল চুলের জন্য খুবই উপকারী।

এই তেল চুলের বৃদ্ধি ঘটায়, মাথার ত্বক ভালো রাখে এবং চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখে। ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ এই তেল চুলে পুষ্টি সরবরাহ ও চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চুল পড়া কমায় ও গোড়া মজবুত করে।

রূপচর্চা-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে জানান হল।

চুল পড়া রোধে ক্যাস্টর অয়েল

1)    চুল পড়ার একটি অন্যতম কারণ হলো স্ক্যাল্পের ইনফেকশন এবং ডিসঅর্ডার। ব্যাক্টেরিয়া, ফাঙ্গাস স্ক্যাল্পকে আক্রান্ত করে দিনে দিনে চুল ঝরাকে বাড়িয়ে দেয় এবং চুলের বৃদ্ধিকে হ্রাস করে। ক্যাস্টর অয়েলের অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল প্রপার্টিস স্ক্যাল্পের ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে যা চুল পড়া কমিয়ে আনে অনেকাংশে।

 

2)    শুষ্কতা বা রুক্ষতা চুল পড়া এবং চুল ভাঙ্গার আরেকটি প্রধান কারণ। ক্যাস্টর অয়েল সহজেই স্ক্যাল্পে শোষিত হয়। ফলে স্ক্যাল্পের ময়েশ্চার এবং নিউট্রিশনের ব্যালেন্স ঠিক থাকে যা চুলের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে।

 

নতুন চুল গজাতে ক্যাস্টর অয়েল

1)    ক্যাস্টর অয়েল স্ক্যাল্পে ভালো মতো ম্যাসাজ করলে এটি স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন যত বাড়বে এর অবস্থা তত উন্নত হবে এবং হেয়ার ফলিকলগুলো আরও সুস্থ্য থাকবে। ফলে তা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।

 

2)    ক্যাস্টর অয়েল ওমেগা ফ্যাটি আসিড (Omega-9 fatty acids) এবং এসেন্সিয়াল ভিটামিনস সমৃদ্ধ যা চুলকে মজবুত এবং উজ্জল করে পুনরায় চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

 

চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে

নিয়মিত তেল মালিশ করলে চুলের বৃদ্ধি হয়, দ্রুত বাড়ে। পাশাপাশি শক্তিশালীও হয়। মাথার ত্বকে গরম তেল মালিশ করার উপকারিতা অনস্বীকার্য। বলা যায় লম্বা চুলের এটাই মূলমন্ত্র। তাছাড়া গরম তেল মালিশ মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে।

 

নারিকেল, জলপাই, কাঠ বাদাম, আর্গন বা মরোক্কান তেলের সঙ্গে কয়েকফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। খুশকির সমস্যা থাকলে এতে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি তেল মেশাতে পারেন। ক্যাস্টর অয়েলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য উপকারী। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর প্রধান কাজই হলো চুলের এবং স্ক্যাল্পের বিষাক্ত পদার্থ হ্রাস করে চুলের বৃদ্ধিকে তরান্বিত করা।

 

 

মাথার ত্বকের সংক্রমণ নিরাময় করতে

মাথার ত্বকের সংক্রমণের কারণে দেখা দেয় চুল পড়া, খুশকি চুলকানির সমস্যা। এতে থাকা ব্যাক্টেরিয়া প্রদাহরোধী উপাদান মাথার ত্বকের সমস্যা দূর করে। এটা ফাঙ্গাসের বিস্তার কমায় ফলে মাথার ত্বক পরিষ্কার সংক্রমণমুক্ত থাকে।

 

চুলের অকালপক্কতা দূর করে

চুলের অকাল পক্কতা দূর করতে চাইলে নিয়মিত ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করুন। এটা মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এর ওমেগাথ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে চুলের ক্ষয় পূরণ করতে সহায়তা করে।

 

চুল পাকতে শুরু করলে চিন্তার কিছু নেই। পাকা চুলে নিয়ম করে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করুন। এটি চুলের রঙ ধরে রাখবে।

জটালোভাব দূর করে

1)      ক্যাস্টর অয়েল চুলের রুক্ষতা আগা ফাটার সমস্যা দূর করে। এটা চুলের জটালোভাব কমায় চুল মসৃণ করতে সাহায্য করে। মাথার ত্বকে এই তেল প্রবেশ করে চুলের গোড়া উজ্জ্বীবিত করে চুলে মসৃণভাব আনে। এই তেলে আছে অলেইক লিনোলেইক অ্যাসিড যা দুষণ, মানসিক চাপ অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে হওয়া চুলের ক্ষতি রোধ করতে সহায়তা করে। তাচ্ছাড়া এই তেল ব্যবহারে চুলের আগাফাটার সমস্যা অনেকটাই কমে আসে।

 

2)      রুক্ষ আগা ফাটা চুলের যত্নে এই তেল ব্যবহার করতে পারেন। এই তেল চুলে মসৃণতা বজায় রাখবে।

 

3)      অনেক সময় চুল শুষ্ক হয়ে উড়তে থাকে। ক্ষেত্রে ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে অলিভ অয়েল নারিকেল তেল মিশিয়ে শুধু চুলে হালকা করে লাগিয়ে নিন।

 

4)      শুধু চুল নয়; ভ্রু চোখের পাতায়ও ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এতে ভ্রু চোখের পাতার ঘনত্ব বাড়বে।

 

ব্যবহারবিধি

() যেহেতু এই তেল খুব ঘন তাই এটি চুলে লাগানোর পূর্বে রেগুলার চুলের তেল (কোকোনাট অয়েল, অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল) এর সাথে মিশিয়ে লাগালে সুবিধা হবে। স্ক্যাল্পে ভালো মতো ম্যাসাজ করে কমপক্ষে ঘণ্টা রাখতে হবে। তেল লাগানোর পর হেয়ার ক্যাপ অথবা হট টাওয়েল চুলে পেঁচিয়ে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এরপর চুলে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। আরও ভালো ফল চাইলে তেল লাগিয়ে পুরো রাত রেখে দিতে পারেন।

 

পরামর্শ:

 1) সারা রাত তেল মাথায় রাখতে না পারলে শ্যাম্পু করার সময় ক্যাস্টর অয়েল কন্ডিশনার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। শ্যাম্পুর পরে দুই ফোঁটা তেল হাতে নিয়ে ভেজা চুলে মেখে নিন। এতে চুল মসৃণ আর্দ্র হবে। 

 

2) চুলের গ্রোথ বাড়ানোর জন্য হট অয়েল ট্রিটমেন্ট হিসেবেও ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে তেল গরম করে নিতে হবে। প্রক্রিয়া টি সহজ করার জন্য ক্যাস্টর অয়েলের বোতলটি গরম পানির একটি গ্লাসে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এরপর স্ক্যাল্পে ভালো মতো ম্যাসাজ করূন।

উপরের নিয়ম দুটি অনুযায়ী তেলটি ব্যবহার করলে আশা করি এক মাসের মধ্যেই ভালো ফল পাবেন।

 

3) ক্যাস্টর অয়েল সরিষার তেল একসঙ্গে গরম করে ব্যবহার করুন। এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। সরিষার তেল জিংক, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ যা মাথার ত্বক আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে।

4) নারিকেল তেলের সঙ্গে অল্প পরিমাণ ক্যাস্টর অয়েল মেশান। চাইলে এতে জল্পাইয়ের তেলও ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুল ভালো থাকবে। সপ্তাহে দুবার তেলের এঈ মিশ্রণটি  ব্যবহারে চুল মাথার ত্বকে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পাবেন। 

ক্যাস্টর অয়েল এর কিছু হেয়ার মাস্ক

1) এক চা চামচ মধু, দুই চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল এবং একটি ডিম ভালো মতো মিশিয়ে চুলে ভালো মতো লাগান। এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এটি আপনার নিষ্প্রাণ এবং রুক্ষ চুলের উজ্জলতা বাড়িয়ে একে নরম করবে।

 

2) সমান পরিমাণ ক্যাস্টর অয়েলতিলের তেল এবং অলিভ অয়েল ভালো মতো মিশিয়ে চুলে এবং স্ক্যাল্পে ভালো মতো লাগিয়ে গরম তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে ৩০ মিনিট রাখুন। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। এটি একটি খুবই কার্যকর হেয়ার টনিক হিসেবে কাজ করে যা চুল এবং স্ক্যাল্পকে খুব ভালো ভাবে কন্ডিশন্ড করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

 

টিপস

1) যদি ক্যাস্টর অয়েল অন্য কোনো তেলের সাথে না মিশিয়ে মাথায় লাগাতে চান, তবে খুব অল্প পরিমাণ তেল নেবেন এবং শুধু স্ক্যাল্পে লাগাবেন। কারণ ক্যাস্টর অয়েল খুব ঘন হওয়ায় এটি পুরো চুলে লাগালে পরে ওঠানো নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।

2) রাতে ক্যাস্টর অয়েল মাথায় দিয়ে ঘুমালে হেয়ার ক্যাপ অথবা তোয়ালে মাথায় পেঁচিযে নিন যাতে বালিশে দাগ না লাগে অথবা বালিশে একটি কাপড় পেঁচিযে নিন।

3) চোখের পাপড়ি ঘন করতে চাইলেও আপনি ব্যবহার করতে পারেন ক্যাস্টর অয়েল। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে কটন বাড্স বা তুলার সাহায্যে ব্রু বা পাপড়িতে লাগাবেন তেলটি। সকালে ধুয়ে ফেলবেন। এক মাসের মধ্যেই পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

 

ক্যাস্টর অয়েল চুলের জন্য উপকারী হলেও এর বেশি ব্যবহারে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, স্কিনে ব়্যাশ, পেটের ব্যথা ডায়ারিয়া হতে পারে। তাই ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করলে নিজের শরীরের দিকে নজর রাখবেন। কোনোরকম সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

My wishlist

Your wishlist is empty